বাঙালির জীবনে শোকাবহ দিন ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে শাহাদাত বরণকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-সহ তাঁর পরিবারের সকল সদস্যকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এবং আত্মার শান্তি কামনা করছি। বঙ্গবন্ধু তাঁর সারাজীবনের সংগ্রাম আর আদর্শিক চেতনার আলোকে বিশ্বাস করতেন বাংলার মেহনতি জনগণ একদিন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনদর্শন ছিল—এদেশের গণমানুষের সুখ-সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি—যার নিয়ামক ভূমিকায় থাকবে জনগণ। তাই বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন-ভাবনায় আমরা সমবায়ের উজ্জ্বল উপস্থিতি দেখতে পাই।

বঙ্গবন্ধুর সমবায় আবেগ এবং পবিত্র সংবিধানের স্বীকৃতি

বাংলাদেশ, বাঙালি ও বাংলা ভাষা ছিল বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনের মূলভিত্তি। আমরা বঙ্গবন্ধুর সমবায় দর্শনকে এই তিনটি প্রশ্নের মাঝে খুঁজে পাই। তার প্রেক্ষিতেই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্য নিয়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে ১৩ (খ) অনুচ্ছেদে দেশের উত্পাদন যন্ত্র, উত্পাদন ব্যবস্থাপনা ও বণ্টনপ্রণালীসমূহের মালিকানার ক্ষেত্রে সমবায়ী মালিকানাকে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় মালিকানা খাত হিসেবে ঐতিহাসিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর সমবায় দর্শন ও কর্মপরিকল্পনা

বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন দেশের প্রতিটি গ্রামে সমবায় সমিতি গঠন করা হবে। তিনি গণমুখী সমবায় আন্দোলন গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন যে কত গভীরে প্রোথিত ছিল এবং সুদূরপ্রসারী চিন্তাসমৃদ্ধ তা লক্ষ্য করা যায় ১৯৭২ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন আয়োজিত সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে।

তিনি বলেছিলেন… ‘বাংলাদেশ আমার স্বপ্ন, ধ্যান, ধারণা ও আরাধনার ধন।

আর সে সোনার বাংলা ঘুমিয়ে আছে চির অবহেলিত গ্রামের আনাচে কানাচে, চির উপেক্ষিত পল্লীর কন্দরে কন্দরে, বিস্তীর্ণ জলাভূমির আশেপাশে আর অরণ্যের গভীরে। ভাইয়েরা আমার, আসুন সমবায়ের যাদুস্পর্শে সুপ্তগ্রাম বাংলাকে জাগিয়ে তুলি’।

কৃষি অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে কৃষিতে সমবায় ব্যবস্থা কার্যকর করার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু কৃষি সমবায়-এর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বিভিন্ন সময়ে যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেছেন সে বিষয়ে কয়েকটি অমর বাণী আমি এখানে উদ্ধৃত করতে চাই। তিনি বলেন,

‘আমাদের আর্থসামাজিক কারণে দেশে দিন দিন জমির বিভাজন বেড়ে চলছে। যদি সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তোলা না যায় তাহলে আমাদের কৃষি উন্নয়ন ব্যাহত হবে, আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত উত্পাদন নিশ্চিত করতে পারব না। আমরা অনেক পিছিয়ে পড়বো। কো-অপারেটিভ সোসাইটির মাধ্যমে আগাতে পারলে আমাদের কৃষির উত্পাদন এবং সার্বিক উন্নয়ন দুটিই মাত্রা পাবে, সমৃদ্ধ হবে।’ (কৃষি ও কৃষকের বঙ্গবন্ধু, পৃষ্ঠা ৫৬, লেখক ড. শামসুল আলম, প্রকাশনায় পার্ল পাবলিকেশন্স)।

তিনি আরো বলেন, ‘সমবায়ের মাধ্যমে গরিব কৃষকরা যৌথভাবে উত্পাদন যন্ত্রের মালিকানা লাভ করবে অন্যদিকে অধিকতর উত্পাদন বৃদ্ধি ও সম্পদের সুষম বণ্টন ব্যবস্থায় প্রতিটি ক্ষুদ্র চাষী গণতান্ত্রিক অংশ ও অধিকার পাবে।’ (বঙ্গবন্ধুর কৃষি বিষয়ক বাণী, পৃষ্ঠা ৪১, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ প্রকাশনা, প্রকাশনায় কৃষি মন্ত্রণালয়, প্রকাশকাল মার্চ ২০২০)।

যশোরে এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘কৃষক ভাইয়েরা সমবায় খামার করো’ সূত্র :দৈনিক ইত্তেফাক, ৩ এপ্রিল ১৯৭২।

কুমিল্লায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর এক সভায় বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সমবায়ের ভিত্তিতে কৃষি উত্পাদন বৃদ্ধি করুন।’ সূত্র :দৈনিক ইত্তেফাক, ২৭ এপ্রিল ১৯৭২।

এমনিভাবে বিভিন্ন সময়ে কৃষি সমবায়ের গুরুত্ব আরোপ করে জাতির পিতা নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

আমরা দেখতে পাই বর্তমান সরকার ২০১৮ সালে যে জাতীয় কৃষি নীতি প্রণয়ন করেছে সেখানে কৃষি সমবায়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে—কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আরো উল্লেখ করা হয় মত্স্য, দুগ্ধ ও সেবাখাতের মতো ফসল উপখাতেও সমবায় কার্যক্রম চালু করার সুযোগ রয়েছে। কৃষি সমবায়ের গুরুত্ব আরোপ করে নীতিমালায় বেশ কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা নিম্নরূপ—

– ১৬.১- ভূমির মালিকানা অক্ষুণ্ন রেখে প্রান্তিক কৃষক, ক্ষুদ্র উত্পাদনকারী উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে স্বপ্রণোদিত সমবায় ভিত্তিক কৃষি উত্পাদনকে উত্সাহ এবং সহযোগিতা প্রদান;

– ১৬.২- সম্প্রসারণ সেবা গ্রহণ ও সমবায়ভিত্তিক উত্পাদন, কৃষি যন্ত্র ব্যবহার, বিশেষভাবে কৃষি উপকরণ সংগ্রহ, ঋণ এবং উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করা;

– ১৬.৩- লাভজনক ফসল উত্পাদন এবং সেচ ও খামার যান্ত্রিকীকরণ কর্মকাণ্ডে সমবায়ভিত্তিক উদ্যোগকে অগ্রাধিকার প্রদান করা;

– ১৬.৪- কৃষি পণ্যের নায্যমূল্য নিশ্চিতকরণে সমবায়ভিত্তিক বিপণনকে সহযোগিতা ও উত্সাহ প্রদান করা;

– ১৬.৫- কার্যকর পানি ব্যবস্থাপনা, সমবায় সমিতিগুলোকে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ ও প্রশিক্ষণ, আয়বর্ধন, সম্প্রসারণসেবা প্রাপ্তি, উপকরণ সংগ্রহ এবং ঋণ প্রাপ্তিতে সহযোগিতা প্রদান করা;

– ১৬.৬- সমবায়ভিত্তিক কৃষিপণ্য উত্পাদন সংরক্ষণ ও বিপণনে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা;

– ১৬.৭- কোনো জমি পতিত বা অনাবাদি না রেখে অনিবাসী ও অনুপস্থিত জমির মালিকদের কৃষি উপযোগী জমি সমবায় ব্যবস্থায় চাষের আওতায় এনে কৃষি উত্পাদন বৃদ্ধি ও বাজারজাতকরণে উদ্বুদ্ধ করা এবং সমবায়ের মাধ্যমে উত্পাদিত পণ্য হতে অর্জিত লভ্যাংশ জমির মালিক, কৃষিশ্রমিক ও সমবায়-এর মধ্যে যৌক্তিক হারে বিভাজনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকলের স্বার্থ সংরক্ষণ।

তাই আমরা দেখতে পাই, কৃষকের স্বার্থ রক্ষার জন্য এবং উত্পাদন বৃদ্ধিতে বঙ্গবন্ধু কৃষি সমবায়ের ওপর যেভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও একইভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলে যাচ্ছেন, দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে, সাথে সাথে তিনি উত্পাদন বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। সরকারের কৃষিনীতিতেও তা প্রতিফলিত হয়েছে। এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, কৃষিক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত ১০ বছরে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। খাদ্য উত্পাদন বেড়েছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে, তথাপি বলতে হয় শস্যক্ষেত্রে কৃষি সমবায়ের তেমন একটা কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। সমবায়ের মাধ্যমে যদি কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে উত্পাদন, বণ্টন ব্যবস্থাপনা সর্বোপরি কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণের সম্ভাবনার দ্বার আরো উন্মোচিত হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট—এই উভয় প্রতিষ্ঠানের যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, সর্বনিম্ন ১ হেক্টর জমি না হলে একটি লাভজনক কৃষি খামার পরিচালনা করা যায় না। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক এর চাইতে কম পরিমাণ কৃষি জমির মালিক। এমনকি যাদের আড়াই একর বা তার কিছু বেশি পরিমাণ কৃষি জমি রয়েছে তারাও তাদের কৃষিকাজের আধুনিকায়নের জন্য দামি যন্ত্রপাতি কিনতে সক্ষম নন। যদি কোনোভাবে কিনেও ফেলেন, ওই যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। নিজের কাজ শেষে যন্ত্র বসিয়ে রাখা বা ভাড়ায় দিতে হয়। কিন্তু সমবায়ের মাধ্যমে যদি অনেক জমি একই ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা যেত তাহলে যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যেত। শুধু তা-ই নয়, উত্পাদনও অনেক বেশি হতো। অনেক অনাবাদি জমি চাষের আওতায় এনে জমির ব্যবহার পরিকল্পনা ঢেলে সাজানো সম্ভব হতো।

কৃষিক্ষেত্রে সেচ ব্যবস্থা একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। পানি ছাড়া কোনো ধরনের কৃষি কাজ চালানো সম্ভব নয়। কয়েক দশক আগে আমাদের দেশে কৃষি কাজের জন্য গভীর নলকূপের সুপারিশ করা হতো। অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, গভীর নলকূপের অতি ব্যবহার পরিবেশবান্ধব নয়, সবচাইতে নিরাপদ পানি হলো জলাধারের সঞ্চিত পানি। জলাধারে পানি বর্ষাকালে সঞ্চয় করে সারা বছর সেই পানির ব্যবহার সর্বোত্তম এবং সেই জলাধার থেকে পাম্পের সাহায্যে সেচনালা বা পাইপে সমবায়ের আওতাধীন জমিগুলোতে স্বল্প অপচয়ে, সেচের পানি ব্যবহার করা যায়। শুধু তা-ই নয়, ভূ-উপরিস্থ জলাধারে সঞ্চিত পানি দিয়ে সেচ দেওয়ার খরচ তুলনামূলকভাবে কম।

কৃষি আধুনিকায়নের জন্য কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রয়োজন। পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর থেকে শুরু করে বহু ধরনের যন্ত্রপাতি সার্বিক কৃষি কাজে ব্যবহার করা যায়। এ সকল যন্ত্রপাতি ক্রয়, পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ যত সহজে সমবায়ের মাধ্যমে করা সম্ভব, তা ব্যক্তি মালিকানায় সম্ভব নয়।

কৃষিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ কৃষি ঋণ যথাসময়ে প্রাপ্তির জন্য কৃষকদের সমবায় সংগঠন খুবই সহায়ক। রেজিস্ট্রিকৃত কৃষি সমবায় হলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ঋণ দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। প্রথমত, ঋণগ্রহীতার নিবন্ধনকৃত পরিচয় রয়েছে; দ্বিতীয়ত, ঋণের সুষ্ঠু ব্যবহারের একটা নিশ্চয়তা থাকে এবং তৃতীয়ত, যথাসময়ে ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা সমবায় দিতে সক্ষম।

এছাড়া উত্পাদিত পণ্য নিরাপদে সংগ্রহ করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবহনের জন্য কিছু কাজ যেমন বাছাই, ছাঁটাই, শ্রেণিবিভাজন, প্যাকেটজাতকরণ বা যথাযথ পাত্রে স্থাপন ইত্যাদি কাজ পণ্যের মানোন্নয়ন ও সংরক্ষণে সহায়ক। নির্দিষ্ট সময়ে বিপণনের জন্য অনেক সময় পণ্য সংরক্ষণ করে রাখার প্রয়োজন।

কৃষিপণ্য বিপণনে আরেকটি কার্যক্রম হলো নিরাপদ পরিবহন। পরিবহনের পাত্র, প্যাকিং ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আবার প্যাকিং পণ্যের ধরনের ওপর নির্ভর করে। শস্য পরিবহনে চটের বস্তা উপযুক্ত হলেও সবজি, ফুল-ফলের জন্য কোনোক্রমেই উপযুক্ত নয়। এসব পণ্যের জন্য বাঁশের বিশেষ টুকরি কিংবা হার্ডবোর্ড, কাগজের বাক্স দরকার। খুব ধনী কৃষক না হলে একজনের পক্ষে সকল সুবিধা সৃষ্টি সম্ভব নয়। সমবায়ের মাধ্যমে এই আয়োজন সহজেই করা যেতে পারে। তাই বলা যায়, কৃষি সমবায় একটি সমন্বিত কার্যক্রম।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যৌথ চাষ পদ্ধতির সুফল

দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান, চীন, ভারত, ব্রিটেনসহ বিশ্বের অনেক দেশ সমবায় ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ব্যবসায়িক উত্পাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে। যৌথ চাষ পদ্ধতি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও ভারতের কেরালা মডেল এখন বিশ্বের অনেক জায়গায় ব্যবহূত হচ্ছে। বাংলাদেশে জরিপ চালিয়ে গবেষকগণ প্রমাণ পেয়েছেন যে, সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদের থেকে যৌথ পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে ফসল উত্পাদন অধিক লাভজনক যা মোটাদাগে নিম্নরূপ :

– আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি যৌথ উদ্যোগে ক্রয় করা হলে শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মূলধন সাশ্রয় হয়।

– ধানে বালাই দমন পূর্বের তুলনায় আনুমানিক ৯.৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

– ফসল কাটা-পরবর্তী ব্যবস্থাপনা শতকরা ৩.৩০ ভাগ সাশ্রয় হয়।

– ফসল বপন/রোপন, আগাছা দমন, শ্রমিক খরচ, যন্ত্রের তেল খরচে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ খরচ সাশ্রয় হয়।

– সেচের পানির অপচয় শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ হ্রাস পায়।

– কৃষি যন্ত্রপাতি মেরামতে খুবই ন্যূনতম খরচ হয়। নিয়মিত ব্যবহারের কারণে সহজে নষ্ট হয় না।

সূত্র : পেপার অন কো-অপারেটিভ ফার্মিং পটেনশিয়াল ফর এস্টাব্লিশিং ফুড সিকিউরিটি উইথ ইন রুরাল বাংলাদেশ (ACTA Universities Vol : 64; page 2067.)

(Three Authors: Vladimir Milovanovic, Lubos Smutka, এবং Jusufi, Czech University of Life Sciences, Prague)

আমাদের এটা মনে রাখতে হবে, সমবায় ব্যবস্থাপনা অন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সাথে সাংঘর্ষিক নয়। সমবায় শুধু অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটা হলো আর্থসামাজিক আন্দোলন, সহযোগিতা ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ, নব প্রজন্মকে উজ্জীবিত করার সহায়ক শক্তি। তাই গণমুখী অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, দারিদ্র্য বিমোচন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশের বিপর্যয় প্রতিরোধ এবং খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টিতে অন্যতম উত্কৃষ্ট পদ্ধতি হচ্ছে সমবায় উদ্যোগ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৪৭তম সমবায় দিবসের বাণীতে উল্লেখ করেছিলেন, ‘… রূপকল্প ২০২১ ও এসডিজি ২০৩০ বাস্তবায়ন এবং আমাদের ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে সমবায়ের ভূমিকা অপরিসীম’। তাই আসুন বঙ্গবন্ধুর ভাষায়, ‘সমবায়ের যাদুস্পর্শে সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে মূল্যবোধের চর্চা ও সমবায়ভিত্তিক সমাজ গঠন করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করি’।

জাতির পিতার সমবায় দর্শন ও কৃষির প্রতি ভালোবাসা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আবেগসিক্ত অঙ্গীকারের ভেতরেই রয়েছে কৃষি সমবায় আন্দোলনকে জনমুখী ও উন্নয়নমুখী করার প্রেরণা। আসুন আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কৃষি সমবায়কে আরো জোরদার করার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হই।

লেখক : সাজ্জাদুল হাসান ।  সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি ও সাবেক সিনিয়র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

সৌজন্যেঃ ইত্তেফাক 

কি খুজছেন এখানে লিখুন